Read more
ডাইনী এত হিংস্র হয়ে উঠেছিল যে এরপর রুপাঞ্জেলকে এক
বিশাল মরুভূমির মাঝে নামিয়ে রেখে চলে এল। যাতে সে খিদে তেষ্টায় কাতর হয়ে মরে যায়।
রুপাঞ্জেলকে মরুভূমিতে রেখে এসে সে মিনারের ঘরে সন্ধ্যে
পর্যন্ত অপেক্ষা করতে লাগল। তারপর যখনই রাজপুত্র এসে রুপাঞ্জেলকে ডেকে চুল
নামানোর জন্য সংকেত ছড়াটা বলল অমনি ডাইনী রুপাঞ্জেলের কাটা চুলের গোছা নিচে
নামিয়ে দিল।
রাজপুত্র তো সেই চুলের গোছা ধরে উপরে উঠে এসে অবাক হয়ে
দেখল কোথায় তার রুপাঞ্জেল। এতো ডাইনী বুড়ি। যে তার দিকে লাল লাল চোখ নিয়ে হিংস্র
দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
--আহা। কি মজার ব্যাপার। তুমি তোমার প্রিয়তমা বৌ এর
খোঁজে এসেছো। তবে তাকে নিয়ে এসো। তবে বেশি দেরী করলে পাখি কিন্তু আর গাইবে না। কোন
না কোন বিড়াল তাকে ধরে খাবে। চিরদিনের জন্যই সে তোমার চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে
যাবে। ডাইনি ব্যাঙ্গ করে বলল।
রাজপুত্র এ কথা শুনে হিতা হিত জ্ঞান শুন্য হয়ে গেল।
দুঃখে কাতর হয়ে সে মিনারের জানালা থেকে বাইরে লাফ মারল। এতে তার প্রাণ বাঁচল।
কিন্তু কাঁটা-ঝোঁপের উপরে পড়ায়, কাঁটার খোঁচায় তার চোখ দুটি অন্ধ হয়ে গেল।
অন্ধ রাজপুত্র বনের মধ্যে ইতঃস্তত ঘুরে বেরায়। কোন রকমে
হাতড়ে হাতড়ে যে সব বুনো ফল এবং কন্দ পেত তাই দিয়ে সে তার খিদে মেটায়। এ ভাবেই
অবশেষে দুঃখে আর কষ্টে তার কয়েকটা বছর কেটে গেল। এভাবেই সে পথ হাঁটত। আর পথ হাঁটতে
হাঁটতে একদিন সেই বিশাল মরুভূমিতে পৌঁছে গেল। যে মরুভূমিতে এক মরুদ্যানে রুপাঞ্জেল
তার যমজ ছেলেমেয়েকে নিয়ে বাস করছে। ছেলেমেয়ে দুটি দুঃখের মঝ্যে জন্মে, দুঃখ-কষ্টের
মধ্যেই বেড়ে উঠেছে। রাজপুত্র মরুভূমিতে একটা কন্ঠস্বর শুনতে পেল। স্বরটা তার কেমন
যেন চেনা চেনা ঠেকতেই সে সেই স্বর অনুসরণ করে পথ হাঁটতে লাগল। এক সময় পৌঁছে গেল
রুপাঞ্জেলের কাছে।
রুপাঞ্জেল অন্ধ হয়ে যাওয়া রাজপুত্রকে কিন্তু চিনতে পারল
না। তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। বর্ষার জলের ধারার মতো তার চোখের জল রাজপুত্রের
চোখে পড়ে রাজপুত্রের শুকনো চাখ দুটি ভিজিয়ে পরিষ্কার করে দিল। ফলে রাজপুত্র আবার
আগের মতো তার দৃষ্টি শক্তি ফিরে পেল। এবার রাজপুত্র তার ছেলে মেয়ে ও বৌকে নিয়ে
রাজ্যে ফিরে এল। সেখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল উৎসব মুখর অভ্যর্থনা। অনেকদিন
তারা সুখে শান্তিতে বেঁচে ছিল।
কিন্তু সেই ডাইনীর কি হল। কোথায় গেল? কেউ জানে না। আমিও
জানি না।
0 Reviews