ব্যাঙ রাজপুত্র

ব্যাঙ রাজপুত্র

Author:
Price:

Read more

ব্যাঙ রাজপুত্র

রাজকন্যা ছোট রাজকন্যা দরজাটা খোল।
শপথ করে দেওয়া কথা কেমন করে ভোল।

সে অনেক অনেকদিল আগের কথা। যখন মানুষ তার কথার খেলাপ করতো না। সে সময় ছিলেন এক রাজা। আর ছিল তাঁর অনেকগুলো মেয়ে। রাজার মেয়ে রাজকন্যা সব। সবারই কি রূপের ছটা। রাজপ্রাসাদে ছিল যেন চাঁদ সূয্যির মেলা। আর সবচেয়ে ছোট যে রাজকন্যা তার কথা তো বলে শেষ করা যাবে না। রাজকন্যাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী এই কন্যার রূপের ছটায় সূয্যিমামাও লজ্জা পেত। যদিও সূর্য তাকে প্রায়ই দেখতে পেত। কারণ আলো ঝলমল দিন সেজে উঠলেই রাজকন্যা প্রাসাদের বাইরে বেরিয়ে আসত।রাজপ্রাসাদের কাছেই ছিল এক আলো আঁধারিতে ঘেরা গৃহীন বন। আর সেই হনের মধ্যে ছিল বিশাল বাতাবী লেবুর গাছ। ঠাকুর্দাদের চেয়ে বয়সে বড়ো সেই ঝাঁকড়া লেবু গাছের তলা দিয়ে বয়ে চলেছে ছোট্ট এক ঝর্ণা। ছোট্ট হলেও তার তল কোথায় কে জানে।একটু বেশি গরম পড়লেই আমাদের ছোট্ট রাজকন্যা এক দৌড়ে চলে যেত সেই মায়াবী আলোছায়ার অরণ্যে। ঝর্ণার ধারে বাতাবী গাছের তলায় গিয়ে বসত।তারপর সময় কাটানোর জন্য একটা সোনার বল বাতাসে ছুঁড়ে দিয়ে লোফালুফি খেলত। এভাবে সময় কাটানো ছিল তার আনন্দের খেলা।তারপর একদিন যা ঘটল সেটাই এখন বলছি শোন। রাজকন্যা তো লুফে নেওয়ার জন্য বলটা উপরে ছুঁড়ে দিয়েছে। কিন্তু বিপত্তি ঘটল লুফতে গিয়ে। হাত ফস্‌কে বলটা পড়ে গেল ঘাসের উপর। তারপর মখমলের মতো সেই ঘাস দিয়ে বলটা গড়িয়ে চলল। আর রাজকণ্যাও ছুটল তার পিছনে পিছনে। কিন্তু বল কেবল গড়িয়ে যায়। রাজকন্যা আর তাকে ধরতে পারে না। এক সময় বলটা গড়িয়ে পড়ে গেল ঝর্ণার জলে। আর তলিয়ে গেল কোন অতলপুরীর দেশে। রাজকন্যা জলের মধ্যে তাকিয়েও কালো আঁধার ছাড়া আর কিছুই দেখতে না পেয়ে আর্তনাদ করে বিলাপ আরম্ভ করল। একসময় আরম্ভ হল জোরে কান্না।তার সাথে আরম্ভ হওয়ার সাথে সাথে ভেসে এল খসখসে এক গলার স্বর- কাঁদছ কেন রাজকন্যা? তোমার চোখের জলে যে পাষাণ গলে যাবে। রাজকন্যা এবার ইতি-উতি তাকাতে যাচ্ছে। এই সময় তার চোখে পড়ল একটা কদাকার ব্যাঙ তার কুৎসিত গলাটা জলের উপর বাড়িয়ে রেখে ড্যাব ড্যাব করে তাকে দেখছে।--‘ও, তুমি মানে জলের বুড়ো ব্যাঙ’—রাজকন্যা অবাক হয়ে বলল ‘একটু আগে কথা বলছিলে তুমি, আমার সোনার বলটা হাত ফস্‌কে জলের মধ্যে তলিয়ে গেছে বলে আমি কাঁদছি’।‘এবার থাম, আর কেঁদ না কন্যে’—ব্যাঙটি বলল, আমি তোমাকে তোমার খেলার জিনিসটি এনে দিই তাহলে তুমি আমাকে কি দেবে?‘সত্যি এনে দেবে? সে জন্য তুমি কি নেবে বলো, আমার সুন্দর জামা-কাপড়গুলো, হীরে-মানিক দিয়ে রত্নহার বা সোনা আর জহরত দিয়ে মোড়া মুকুট—কি চাই তোমার তাড়াতাড়ি বল’।‘হীরে—কি চাই তোমার তাড়াতাড়ি বল’।‘হীরে মানিক, জামা-কাপড় ও-সব আমি কিছুই চাই না, তুমি কেবল আমাকে একটু ভাল বাসবে, আমাকে তোমার সাথি করে নেবে। তোমার সাথে আমি এক টেবিলে বসে তোমার সোনার থালা থেকে খাবার ভাগ করে খাব, তোমার সাথে তোমার ছোট বিছানায় ঘুমাব। তুমি যদি এতে রাজি থাক তবে প্রতিজ্ঞা কর বলটা এনে দিলে তুমি তোমার কথা রাখবে।



  

0 Reviews