Read more
সাত বাচ্চা
ছাগীর ছিল
বাচ্চা সংখ্যায় সাত
চরতে আমি
যাচ্ছি তোরা সাবধানে থাক
শয়তান নেকড়ে
এসে চালায় যদি বাত
দরজা ভুলে
খুলবিনাকো যতই করুর হাঁক ডাক
আসলে উপরের কথাগুলোই
আর একটু গুছিয়ে ভালভাবে ছাগী চরায় বেরিয়ে ছিল। হ্যাঁ, ঘটনাটা ঘটেছিল অনেকদিন আগে।
জঙ্গলের ধারে বাস করত এক ছাগী তার সাত বাচ্চাকে নিয়ে। তা একদিন জঙ্গলে যেতে হবে
খাবার আনতে। মনে ভয় যদি নেকড়ে এসে তার বাচ্চাদের খেয়ে নেয়। তাই সে যাবার আগে বলল,
বাচ্চারা আমি জঙ্গলে যাচ্ছি খাবার আনতে। তোমরা দরজা বন্ধ করে সাবধানে থাকবে। না
হলে সুযোগ পেলেই শয়তান নেকড়েটা ঘরে ঢুকে তোমাদের হাড় মাংস চিবিয়ে খাবে। কোন চিহ্নই
রাখবে না তোমাদের। তবে মনে রাখবে সে নানান ছদ্মনামে আসতে পারে। তাকে চিনতে পারবে
তার কর্কশ গলা আর কালো পা দেখে।
বাচ্চারা সব এক সাছে চিল্লিয়ে বলল, তোমার ভয় নেই মা, তুমি নিশ্চিন্তে যাও।
আমরা খুব সাবধানে থাকব।
তা ছাগী তো নিশিন্ত মনে বেরিয়ে পড়ল। আর তার কিছুক্ষণের মধ্যে দরজায় ঠুকঠাক
করে আঘাত। কেউ যেন দরজা খুলতে চেষ্টা করছে। একসময় বলতে শোনা গেল বাচ্চারা দরজা
খোল, তোমাদের মা ফিরে এসেছে। তোমাদের সবার জন্য কিছু না কিছু এনেছে। কিন্তু ছোট
বাচ্চারা গলা শুনেই বাঝতে পারল এটা তাদের মায়ের গলা নয়। এটা নেকড়ের গলা।
তাই তারা বলল, আমাদের মায়ের গলার স্বর কত সুন্দর, মিষ্টি, তার সব কথায়
আমাদের প্রতি ভালবাসা ঝরে পড়ে। কিন্তু এতো খুব কর্কশ গলা, তার মানে তুমি বদমায়েস
নেকড়ে। আমরা দরজা খুলব না।
নেকড়ে তখন একটা দোকানে গেল এবং সেখান থেকে কিছু খড়ি মাটি নিয়ে খেয়ে ফেলল।
এতে তার গলার কর্কশ গলার স্বর বদলে গিয়ে কিছুটা মিষ্টি হল।
তখন সে আবার এসে ছাগীর কুঁড়ের দরজায় টোকা দিয়ে বলল, বাছারা তোমার মা এসেছে,
দরজা খোল। দেখ তোদের সবার জন্য কত কি এনেছি। কিন্তু নেকড়ে ভুল করে সামনের পা দুটো জানলার
উপর তুলেছিল। খড়খড়ির ফাঁক দিয়ে বাচ্চারা সেই পা দেখতে পেয়ে বলল, আমাদের মায়ের এত
কালো পা নয়। থাবাও নেই মায়ের। তুমি নিশ্চয় বদমায়েশ নেকড়ে। আমরা দরজা খুলব না।
নেকড়ে তখন দৌড়ে গাঁয়ের রুটিওয়ালার কাছে গেল। তাকে বলল, আমার পা গুলো একটু
পুড়িয়ে দাও। রুটিওয়ালা তাই করল।
তারপর নেকড়ে এক মুদি দোকানে গিয়ে বলল, আমার পা গুলো সাদা ময়দা দিয়ে ঢেকে
দাও।
মুদি বুঝতে পারল নেকড়ের কোন বদ মতলব আছে। সে কাউকে ঠকাবে। তাই সে রাজি হল
না। তখন নেকড়ে বলল, তাড়াতাড়ি করে দে নাহলে তোক চিবিয়ে খাব। মুদি তো ভয়ে মুর্ছা যায়
আর কি? তাড়াতাড়ি নেকড়ের পাগুলো সাদা ময়দা দিয়ে ঢেকে দিল।
শয়তান এবার তৃতীয়বারের মত ছাগীর কুঁড়ের সামনে এসে দরজায় ধাক্কা দিল। বলল
বাছারা দরজা খোল। আমি মা, জঙ্গল থেকে তোদের জন্য অনেক কিছু নিয়ে এসেছি।
ছোট্ট বাচ্চারা বলল, আগে পাগুলো দেখাও, যাতে আমরা বুঝতে পারি তুমি আমাদের
মা। নেকড়ে তখন জানলার উপর পা তুলে দিল। তারা দেখল ধবধবে সাদা পা। তারা কুঁড়ে ঘরের
দরজা খুলে দিল।
কিন্তু একে? দরজা খুলে ঘরে ঢুকল নেকড়ে। বাচ্চারা তো ভয়ে কাঁপতে লাগলো। ঘরের
আনাচে কানাচে লুকোনোর চেষ্টা করতে লাগলো। একজন টেবিলের তলায়, আর একজন বিছানার
নিচে। তৃতীয়জন বাসনকোসন রাখার জায়গার পিছনে। চতুর্থ জন রান্নাঘরে। পঞ্চম জন ঢুকলো
নিভে যাওয়া উনানে। ষষ্ঠজন গিয়ে স্নান করার বালতিতে লুকোল। সপ্তমজন যে সবচেয়ে ছোট
সে লুকালো যেয়ে বড় ঘড়ির বাক্সে। এবং নেকড়ে যখন খুঁজে খুঁজে এক এক করে ছয়জনকে গিলে
খেয়ে পেট ভর্তি হয়ে যাওয়ায় তৃপ্ত হয়ে বেরিয়ে গেল। সপ্তমজন ছোটটাকে খুঁজেই পেল না।
একটা গাছের তলায় গিয়ে নেকড়েটা ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল।
মা ছাগল কিছুক্ষণ পরেই জঙ্গল থেকে ফিরে এল। কিন্তু এ কি দেখছে সে? ঘরের
দরজা হাট করে খোলা। জিনিসপত্র সব লন্ডভন্ড। বিছানায় লেপ বালিশ ছিঁড়ে তুলো উড়ছে।
চানের বালতি ভাঙা। চেয়ার-টেবিল উল্টে পড়ে আছে। তার বাছাদের কাউকে দেখা যাচ্ছেনা।
কোথাও তাদের খুঁজে না পেয়ে সে এক এক করে তদের নাম ধরে ডাকতে লাগল। কেউ সাড়া দেয়
না। সবশেষে ছোট ছেলে ভয়ার্ত কন্ঠস্বর খুব আস্তে ডেকে এল, মা আমি এখানে ঘড়ির
বাক্সের মধ্যে।
0 Reviews