Read more
এরপর বেশ কিছুদিন কেটে গেল। নতুন
জীবন পেয়ে রানীর মনেও পরিবর্তন এসেছে। তোয়াক্কা না করে তাকে বাঁচিয়েছে তাকে আর তার
ভাল লাগবে না। কারণ সে আগে ছিল এক গ্রাম্য যুবক। এখনো সে সহজ, সরল। অতএব কিছুদিন
পরে সে বলল সমুদ্রে প্রমোদ ভ্রমনে যাবে। বুড়ো বাবার কাছে গিয়ে সে সম্মতি আদায় করে
নিল। সম্রাটের আদেশে রাজকীয় জাহাজ প্রস্তুত হল প্রমোদ ভ্রমণের জল্য। জাহাজ সমুদ্রে
ভেসে পড়ল। একদিন মাঝ দরিয়ায় যুবরাজ যখন ঘুমোচ্ছে তখন সে জাহাজের ক্যাপ্টেনকে ডেকে
তার পরিকল্পনা খুলে বলল। যুবরাজকে সে মেরে জলে ভাসিয়ে দিলে সে ক্যাপ্টেনকে বিয়ে
করবে একথাও বলল। ভুলে গেল যুবরাজ তাকে কত ভালবাসে। কীভাবে তার জীবন বাঁচিয়েছে। তখন
ক্যাপ্টেন যুবরাজের গলা টিপে ঘুমন্ত অবস্থাতেই মেরে ফেলল। তারপর সে মাথার দিকটা
ধরল আর রানি ধরল পা দুটি। তারপর যুবরাজের দেহ জাহাজ থেকে সমুদ্রের জলে ফেলে দিল।
রানি এবার বলল, চল ফিরে প্রাসাদে।
সেখানে বলব, সমুদ্র ভ্রমণের সময় যুবরাজ মরে গেছে। এবং তুমি আমাকে কতভাবে সাহায্য
করেছ বলে তোমার এত প্রশংসা করব যে বাবা আবার তোমার সাথে আমার বিয়ে দেবেন। তারপর
তুমি সম্রাট হবে।
কিন্তু সেই বিশ্বামী অনুচর সব
ঘটনাই নিজের চোখে দেখেছিল। যুবরাজের দহে জলে ছুঁড়ে ফেলা মাত্র সেও জাহাজের পেছনে
লাগানো একটা ছোট নৌকা খুলে অকূল দরিয়ায় ভেসে পড়ল। খুঁজতে লাগল তার প্রভুর দেহ।
ওদিকে বিশ্বাসঘাতক জাহাজও দূরে চলে গেল। এক সময় সে প্রভূর দেহ পেল এবং সেটা নৌকাতে
তুলে সাপের দেওয়া তিনটি পাতার সাহায্যে যুবরাজকে বাঁচিয়ে তুলল। এরপর তারা
দিনরাত্রি খুব জোরে দাঁড় টেনে নৌকা বাইতে লাগল সমুদ্রের বুকে। এর ফলে তাদের ছোট্ট
নৌকা জাহাজের অনেক আগেই রাজকীয় বন্দরের কাছে পৌছে গেল। তারপর তারা সকলের চোখ এড়িয়ে
তাড়াতাড়ি প্রাসাদে সম্রাটের কাছে উপস্থিত হল।
সম্রাট যুবরাজকে একা ফিরে আসতে দেখে অবাক। জানতে
চাইলেন কি ঘটেছে। তারপর সব শুনে বললেন, আমার বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে যে, আমর
মেয়ে এরকম কাজ করতে পারে। তবে অপেক্ষা কর। তাদের ফিরে আসতে দাও। তখনই প্রকৃত ঘটনা
বুঝতে পারব।
এরপর তিনি দু’জনকেই সবার চোখের
আড়ালে এক গোপন কক্ষে লুকিয়ে রাখলেন।
এক সময় রাজকীয় জাহাজ বন্দরে ভিড়ল।
রানি বিষাদ আর শোকের ভান করে সম্রাটের সামনে এসে দাঁড়াল।
--তোমার স্বামী কোথায়? তুমি একা
ফিরে এলে? সম্রাট জিজ্ঞাসা করলেন।
--হায়, আমার কপাল। হতভাগিনী আমি।
বাবা বুক ভরা শোক নিয়ে আমি ফিরে এসেছি। প্রমোদ ভ্রমণের সময় সে অসুস্থ হয়ে মারা
গেছে। এই ভাল ক্যাপ্টেন না থাকলে আমিও প্রাণে বেঁচে ফিরতাম না। সব সময় আমার পাশে
থেকেছে। আমার স্বামীর জলসমাধিরও ব্যবসথা করেছে। এখন তার কাছ থেকেই সব কিছু শোন।
আমি আর বলতে পারছি না।
--আমি মৃতকে জীবিত করে নিয়ে আসব।
এই বলে সম্রাট যে গোপন কক্ষে যুবরাজ ও তার অনুচরকে লুকিয়ে রেখেছিলেন তার দরজা খুলে
দিলেন। যে মুহূর্তে তার স্বামী যুবরাজকে দেখল সেই মুহূর্তে মনে হল তার মাথায় বাজ
পড়ল। ঠকঠক করে তার হাঁটু কাঁপতে লাগল। সে বারবার ক্ষমা চাইতে লাগল।
--তোমার জন্য কোন ক্ষমা নেই।
সম্রাট বললেন—
‘যে তোমার জন্য সবসময় মরতে রাজি,
যে তোমাকে জীবন দান করেছে তাকে তুমি ভুলে গেলে। চক্রান্ত করে তার ঘুমের অসহায়তার
সুযোগ নিলে। এই কাজের উপযুক্ত শাস্তি তোমাকে নিতেই হবে।
এরপর তাকে আর তার সহযোগী
ক্যাপ্টেনকে অনেকগুলো ফুটোওয়ালা একটা জাহাজে তুলে সমুদ্র ভাসিয়ে দিলনে। জাহাজসহ
তারা ধীরে ধীরে সমুদ্রের অতল গহ্বরে তলিয়ে গেল।
0 Reviews