Read more
বৌ মারা যেতেই যুবরাজের বিয়ের
সময়ে কঠিন প্রতিজ্ঞার কথা মনে পড়ল। বৌয়ের সাথে জীবন্ত কবরে যেতে হবে। পালাবারও
কোনও উপায় নেই। সম্রাট সব দরজাতেই প্রহরী রেখে দিয়েছেন। অতএব সে ভাগ্যকে মেনে নিল।
নির্দিষ্ট দিনে রাজকীয় কবর সৌধের দরজা খুলে কফিন বন্দী বৌয়ের মৃতদেহ সহ তাকে ভেতরে
ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে তালা বন্ধ করে দেওয়া হল। একটু ধাতস্থ হয়ে যুবরাজ
তাকিয়ে দেখল কফিনের কাছে একটি টেবিল। টেবিলে চারটে বড় রুটি এবং চার বোতল আঙুরের
রস। তার মানে এই খাবার খেয়ে যতদিন বাঁচা যায়। তারপর অনাহারে তিল তিল করে মৃত্যু।
গভীর শ্বাস ছেড়ে দুঃখের সঙ্গে সে বসে পড়ল। প্রত্যেকদিন সে যত কম সম্ভব রুটি খেত
এবং এক চুমুক করে আঙুরের রস খেতে যত তার রুটি এবং আঙুরের রস কমে আসতে লাগল ততই সে
মৃত্যুকে কাছাকাছি দেখতে লাগল।
একদিন সে যখন বসে বসে তার
দুর্ভাগ্যের কথা ভাবছে তখন সে দেখল একটা সাপ কবর ঘরের কোণা থেকে আস্তে আস্তে
বেরিয়ে তার মৃতা স্ত্রীর দেহ তোকে ছুঁতেও দেব না। এই বলে সে কোমর থেকে তার তরবারী
বের করে সাপটাকে কেটে তিন টুকরো করে ফেলল।
কিছুক্ষণ পরে দেখল আরেকটা সাপ কোণ
থেকে বেরিয়ে আসছে। কিন্তু সাপটা দেখল অন্য
সাপটা মরে আছে তখন সেই সাপটা ফিরে গেল। কিছুক্ষণ পরেই সাপটা তিনটি পাতু মুখে করে
ফিরে এল। এরপর সাপের কাটা তিন টুকরো পরপর সাজালো যাতে জোড়া লেগে আগের মত হয়।
প্রত্যেক জোড়ের জায়গায় একটা করে পাতা রেখে দিল। আর তারপরই কাটা জায়গাগুলো জোড়া
লেগে সাপটা জীবন্ত হয়ে গেল। সাপ দুটো হিস্ হিস্ করে ঘরের কোণের দিকে চলে গেল।
পাতাগুলো মেঝেতেই পড়ে থাকল।
হতভাগ্য যুবরাজ সব দেখে ভাবল এই
পাতাগুলোর নিশ্চয়ই বিস্ময়কর ক্ষমতা আছে। যার ফলে মরা সাপটাও বেঁচে উঠেছে। সে তাই
পাতাগুলো তুলে নিল। তারপর সে পাতা তিনটির একটি মৃতা স্ত্রীর মুখে এবং দুটি পাতা দু
চোখে রেখে দিল। আর এটা করার পরই দেখল রানির দেহে রক্ত চলাচল আরম্ভ হয়েছে। ফ্যাকাশে
ভাব কেটেগিয়ে আবার রানী আগের মত সুন্দর-সজীব হয়ে উঠেছে। একসময় রানি গভীর ভাবে
শ্বাস ছেড়ে চোখ খুলল।
--আমি, আমি কোথায়। রানির প্রথম
কথা।
--তুমি আমার সাথে আছ। একথা বলে
যুবরাজ কি কি ঘটেছিল সব কথা রানিকে খুলে বলল। তারপর রানিকে কিছু রুটি ও আঙুরের রস
খাওয়াতে রানি চাঙ্গা হয়ে উঠল। পুনরায় শক্তি ফিরে পেলে দু’জনে দরজার কাছে গিয়ে জোরে
ধাক্কা দিয়ে চিৎকার করতে লাগল। তাদের চিৎকারে কবর রক্ষকরা দৌড়ে গিয়ে সম্রাটকে খবর দিল।
সম্রাট নিজে এসে কবরের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে দু’জনকেই জীবন্ত দেখে বিস্মিত হলেও খুব খুশি হলেন।
যুবরাজের কাছে সব জেনে ভগবানকেও ধন্যবাদ দিলেন। তারপর মেয়ে-জামাইকে বাইরে এনে
কবরের দরজা বন্ধ করে দিলেন।
যুবরাজ কিন্তু সেই
পাতা তিনটি সাথে করে নিয়ে এসেছিল। পাতাগুলে সে তার বিশ্বস্ত অনুচরকে গিয়ে বলল,
এগুলি আমার জন্য সবসময় খুব যত্ন করে রাখবে। কে জানে কীভাবে বিপদ আসে। তখন এগুলো
খুব কাজে লাগবে।
0 Reviews