Read more
স্বপ্ন পাইয়া সদাগরের মা স্বপ্নের কথা
ছেলেকে আর ছেলের বৌকে বলিলেন। সদাগর তখন রাজকন্যাকে লইয়া দুধপুকুরের খোঁজে চলিলেন।
নদীর জলে ছল্ ছল্ করিয়া সদাগরের ডিঙ্গা
চলিল।
ডিঙ্গার মাঝিমাল্লারা পথের লোককে ডাকিয়া
জিজ্ঞাসা করে—‘সাদা ধবধবে দুধের রঙের জল এমন দুধপুকুর আছে যে রাজবাড়িতে তাহা কি
তোমরা চেন?’
পথের লোকেরা কেহ বলে উঁহু, কেহ বলে হুঁ। যে
হুঁ বলিল তার নিকট হইতে পথঘাট চিনিয়া লইয়া ডিঙ্গা চালাইতে চালাইতে মাঝি মাল্লারা
দুইমাস ধরে রাজবাড়ির অন্দরমহলে সত্যই এক দুধপুকুর আছে, আর তার জলও দুধের মতই সাদা।
দুধপুকুরের খোঁজ তো মিলিল, উহাতে নাইতে হইলে
রাজবাড়ির অন্দরমহলে যাওয়া চাই, আর নাইতেও হইবে পূর্ণিমার রাতে,--সদাগরের ডিঙ্গা
রাজবাড়ির ঘাটেই বাঁধা রহিল। পূর্ণিমা রাতে সদাগরকে ডিঙ্গায় রাখিয়া রাজকন্যা
দুধপুকুরে নাইতে রাজবাড়ির অন্দরমহলে
চলিলেন।
কোথাকার কোন্ বিদেশী দুধপুকুরে নাইতে
আসিয়াছে, রাজপুরীতে আগেই সে কথা রটিয়া গিয়াছে। রাজপুরীতে লোকজনেরা সন্ধ্যা হইতেই
দুধপুকুরের পারে সারি দিয়া দাঁড়াইয়া রহিল। রাজকন্যা পুকুরের ঘাটে পা দিতেই
জলপদ্মের গন্ধে চারদিক ম’ ম’। তার উপর তাঁহাকে দেখিয়াও সবাই অবাক—কে এই স্বর্গের
অপ্সরী, গায়ে দুধে-আলতা-মিশানো স্থলপদ্মের রং আর কালো কুচকুচে দুই ভুরুর মাছে
শ্বেতপদ্মের একটি টিপ।
ছোটরানীর দাসী ছোটরানীর মহলে দৌড়াইয়া গিয়া
খবর দিল—‘রানী-মা স্বর্গের কোন অপ্সরী যেন দুধপুকুরে নাইতে আসিয়াছে। সে পুকুরের
ঘাটে পা দিতেই জলপদ্মের গন্ধে চারিদিক্ জলপদ্মের গন্ধে চারদিক্ ম’ ম’। তার উপর
তার গায়ে দুধে-আলতা-মিশানো স্থলপদ্মের রঙ, আরো কালো কুচকুচে দুই ভুরুর মাঝে
শ্বেতপদ্মের একটি টিপ।
দাসীর কথা শুনিয়া ছোটরানী উঠিলেন। ছ্যাঁৎ
করিয়া স্বপ্নের কথা তাঁর মনে পড়িল। দুধপুকুরের পদ্মফুল বাটিয়া খাইয়া তার যে
রাজকন্যাকে পাওয়ার কথা ছিল, এতদিনে সে-ই আসিল নাকি। ছোটরানী দুধপুকুরের ঘাটের দিকে
জানালায় দাঁড়াইয়া রাজকন্যাকে দেখিতে লাগিলেন।
0 Reviews