Read more
বড়রানী রাজকন্যাকে রাজবাড়ির ত্রিসীমানায় ও
রাখিলেন না-নতুন হাঁড়ির ভিতর শোয়াইয়া নতুন সরা মুখে চাপা দিয়া নদীর জলে ভাসাইয়া
দিলেন।
হাঁড়ির ভিতরে রাজকন্যা নদীর জলে ভাসিয়া
চলিয়াছেন। নদীর ঢেউয়ে হাঁড়িতে যখন দোলন লাগে, রাজকন্যা কাঁদিয়া উঠেন।
নদীর পারে বটগাছের মাথায় এক শঙ্ঘচিলের বাসা।
শঙ্খচিল বাসায় বসিয়া শোনে হাঁড়ির ভিতরে মানুষের কান্নার শব্দ। শঙ্খচিল শোঁ করিয়া
উড়িয়া আসিয়া হাঁড়ির উপর বসিল। তার ঠোঁট দিয়া হাঁড়ির মুখের সরা সরাইয়া
দেখে-দিব্য-সুন্দর ফুটফুটে এক রাজকন্যা। শঙ্খচিল রাজকন্যাকে মুখে করিয়া বটগাছের
মাথায় লইয়া গেল।
রাজকন্যা শঙ্খচিলের বাসায় থাকেন, শঙ্খচিলের
পিঠে চড়িয়া নীচে নামিয়া আসেন, আর শঙ্খচিল যখন চরিতে যায়, তখন নদীর পাড়ে বসিয়া খেলা
করেন। শঙ্খচিল এদেশ যায়, ওদেশ যায়, রাজকন্যার জন্য ঠোঁটে করিয়া রাজ্যের জিনিস লইয়া
আসে। রাজকন্যার সাজসজ্জার, খাবার-দাবারের দুঃখ নাই—দিনে দিনে রাজকন্যা শঙ্খচিলের
বাসায় বাড়িয়া উঠেন।
একদিন সেই নদী দিয়া সাত ডিঙ্গা বোঝাই করিয়া
এক সদাগর চলিয়াছেন। সদাগর ডিঙ্গায় বসিয়া জলপদ্মের গন্ধ পান। নদীর জলে পদ্মফুল
কোথায়?...সদাগর এদিকে চান, ওদিকে চান, নদীর পারে নজর পড়িতে দেখেন-যেন থোকাবাঁধা
পদ্মফুলের রাশ। কিন্তু কেমনই বা এই পদ্মফুলের রাশ। আর কেমনই বা এই পদ্মফুল? হাওয়ায় যে-পদ্ম দোল খায় তাহা বোঁটার সঙ্গেই নড়চড়ে, এ
যেন দেখি চলন্ত পদ্ম।–এদিকে যায়, ওদিকে যায়, কোনখানেই স্থির নাই। সাত ডিঙ্গা কুলে
ভিড়াইয়া সদাগর পাড়ে উঠিলেন। উঠিয়া দেখেন—
চলন্ত পদ্মই বটে, এ কোন্ পদ্মফুল।
চক্ষে কভু পড়ে নাই রে এমন রূপের তুল।
-চোখে পলক পড়ে না, সদাগর একদৃষ্টে রাজকন্যার
দিকে তাকাইয়া ভাবেন-এ কি স্বর্গের অপ্সরা।
সদাগর ডিঙ্গা লাগাইয়া নদীর পাড়ে সাতদিন
রহিলেন- রাজকন্যাকে না পাইলে তিনি দেশে ফিরিবেন না। রোজই তিনি রাজকন্যাকে দেখেন।
আর শঙ্খচিলকে দেখিলেই ধরিয়া পড়েন—তিনি রাজকন্যাকে বিয়ে করিতে চান।
শঙ্খচিল ভাবিল—বিয়ের বয়স হইয়াছে, মেয়ের বিয়ে
দেওয়ায় ক্ষতি কি।
0 Reviews