Read more
এক রাজা। রাজার দুই রাণী। কোন রানীরই ছেলেপিলে হয় না – রাজার মনেও শান্তি নাই,
রানীদের মনেও শান্তি নাই।
রাজা যাগ করেন যজ্ঞ করেন, ত রানীরা বার মাসে
তের ব্রত করেন, কিছুতেই কিছু হয় না।
একদিন পূর্ণিমার রাতে ছোটরানী হঠাৎ স্বপ্ন
দেখেন—রাজবাড়ির অন্দরমহলে দুধপুকুরের মাঝখানে সাদা ধবধবে একটা পদ্মফুল ফুটিয়া আছে,
সেই ফুল তুলিয়া আনিয়া তিনি বাটিয়া খাইয়াছেন, আর কোলে পাইয়াছেন দিব্য-ফুটফুটে একটি
রাজকন্যা। রাজকন্যার নাকের নিঃশ্বাসে জলপদ্মের গন্ধ, গায়ে দুধে আলতা-মিশানো
স্থলপদ্মের রঙ আর কালো কুচকুচে দুই ভুরুর মাঝে শ্বেতপদ্মের একটি টিপ।
স্বপ্ন দেখিয়াই ছোটরানী তড়াক করিয়া বিছানা
ছাড়িয়া উঠিয়া বসিলেন। তারপর কাহাকেও কিছু না বলিয়া খিড়কির দরজা খুলিয়া দুধপুকুরের
পাড়ে ছুটিয়া গেলেন। সেখানে গিয়া দেখেন-সত্য সত্যই দুধপুকুরের মাঝখানে সাদা ধবধবে
একটা পদ্মফুল, পদ্মফুল দেখিয়া ছোটরানীর আর তর সয় না—জলে ঝাঁপাইয়া পড়িয়া দুধপুকুরের
মাঝখানে গিয়া পদ্মফুলটি তুলিয়া আনিলেন। তারপর রাজপুরীতে ফিরিয়া আসিয়া ফুলটি বাটিয়া
খাইয়া শুইয়া রহিলেন।
দিনের পর দিন যায়। কিছুদিন যাইতে না-যাইতেই
ছোটরানীর মনে আনন্দ ধরে না-স্বপ্নের ফল বুঝি সত্য হইল।
বড়রানী আর-চোখে ছোটরানীর দিকে চান, আর মনের
হিংসায় জ্বলিতে থাকেন-হায় হায়, ছোটর কপাল হইল বড়, আর বড় হইয়াও তাঁর মান বুঝি থাকে
না।
বড়রানী দিনরাত দাসীবাঁদীর সঙ্গে যুক্তি
করেন, রাজবাড়ি ধাইকে ডাকিইয়া আনিয়া কানে কানে কথা কন্। দশমাস দশদিনের দিন বড়রানী
আঁতুড়-ঘরের পিছনে লুকাইয়া রহিলেন। আঁতুড়ঘরে যেই না ছোটরানীর মেয়ে হইয়াছে, অমনি ধাই
পিছনদিক দিয়া তাহাকে বড়রানীর হাতে দিল আর ছোটরানীর কোলের কাছে রাখিয়া দিল একটি
বিড়াল-ছানা। রাজবাড়ির কেহই জানিতে পারিল না ব্যাপার কি হইল। ছোটরানীও বুঝিতে
পারিলেন না-কেন এমন হইল।
0 Reviews