Read more
হস্তিনাপুরে বিলাস নামে এক ধোপা ছিল। তার ছিল একটা গাধা। খাটতে খাটতে অত্যন্ত
দুর্বল হয়ে পড়েছিল সে। ঠিকমত খাটতেও পারে না। ধোপাও পড়ল বিপদে।
একদিন ধোপা ভাবল, নাঃ গাধাটাকে বনের পাশে ছেড়ে দিয়ে আসি। খেয়েদেয়ে মোটা হলে
আবার আনব। কিন্তু বাঘ যদি খেয়ে ফেলে, তাই সে করল কি গাধাটার গায়ে একটা বাঘের চামড়া
পরিয়ে ছেড়ে দিয়ে এল বনের পাশে।
এখন গাধাটার হয়েছে খুব মজা। খাটতেও হয় না আর খেতেও অসুবিধে নেই। তাকে দেখে
জন্তুজানোয়ার তো বটেই, মানুষও তার ধারেকাছে আসে না। সবাই তাঁকে বাঘ বলেই ধরে
নিয়েছে। মনের আনন্দে সে ঘাস খায়।
তারপর দিন যায়। সে এখন বেশ হৃষ্টপুষ্ট হয়েছে। বাঘের চামড়ার জন্য সবাই তাকে ভয়
পায় বলে দিনে দিনে তার সাহসও বেড়েছে।
এরই মধ্যে সে গ্রামে এসেও এর ক্ষেতে ওর ক্ষেতে শস্য খেয়ে বেড়ায়। বাঘের ভয়ে
কৃষকরাও পালিয়ে যায়। ক্ষেতে ঢুকতেই পারে না। কিন্তু তাহলেও তো তারা ছেড়ে দিতে পারে
না। মরীয়া হয়ে একদিন এক কৃষক তীর-ধনুক নিয়ে এসে লুকিয়ে রইল ক্ষেতের কাছে। গাধাটা
তখন ঘাস খেয়েই যাচ্ছে। হঠাৎ তার নজরে পড়ল একটা লোক লুকিয়ে রয়েছে তীর-ধনুক নিয়ে।
লোকটাকে দেখে গাধাটা গেল রেগে।রাগ হবে না কেন? এতদিন তো সে দেখে এসেছে তাকে দেখে
লোক পালিয়ে যায়। তাই তার সাহসও গিয়েছিল বেড়ে। তাছাড়া থখন গায়েও তো শক্তি হয়েছে।
তাই সে মনে মনে ভাবল, কি, আমাকে দেখে ভয় পেলি না? দাঁড়া তবে। বলেই সে হাক্কো
হাক্কো করে চীৎকার করে ছুটল লোকটার দিকে।
এদিকে লোকটা গাধাটাকে প্রথমে বাঘ মনে করেছিল ভয় পেয়ে। এখন তার চিতকার শুনে
লাফিয়ে এল বাইরে, ওরে, তুই বাঘ নস, গাধা। বলেই সে তক্ষুনি ধনুকে তীর ছুঁড়ে পটাপট
মেরে শুইয়ে দিল তাকে। হাক্কো হাক্কো করে যন্ত্রনায় কাতরাতে কাতরাতে তারপর নিশ্চল
হয়ে গেল গাধা।
‘তাই বলছিলাম বহুদিন যাবৎ খেতে গিয়েই না তা হয়েছিল’।
‘থাকগে মহারাজ’—দীর্ঘমুখ তার গল্প আবার বলতে লাগল, ‘তারপর সেই পাখিরা বলল, ওহে
ধুর্ত বক, তুমি আমাদের দেশে এসে আমাদের রাজাকেই নিন্দে করছ বলেই তারা সবাই মিলে
আমাকে ঠোকরাতে লাগল। মূর্খ, তোদের রাজা কোমল প্রকৃতির। রাজ্যে তার অধিকার নেই।
কোমল প্রকৃতির লোক নিজের হাতের টাকাই রক্ষা করতে পারে না, সে করবে পৃথিবী পালন?
তুই তো কূপমণ্ডুক, তাই তার আশ্রয় গ্রহণ করতে উপদেশ দিচ্ছিস। শোন ঃ
ফল ও ছায়াযুক্ত বিরাট গাছকেই আশ্রয় করা উচিত।
দৈবাৎ যদি ফল না ও থাকে তবে রোদকে নিবারণ করবে।
তোদের রাজা যদি কৌশলীও হয় তবুও কি পারবে আমাদের রাজার সঙ্গে? কথায় আছে ঃ
প্রবল রাজাকেও কৌশলে পরাজিত করে জয়লাভ করা যায়। চন্দ্রের নামকীর্তন করেই না
খরগোসেরা সুখে বাস করছিল।
‘আমি বললাম’। দীর্ঘমুখ বলল, ‘কি রকম?’
‘তবে শোন’। পাখিরা বলতে লাগল ঃ
0 Reviews