Read more
সে নগর আবার আরেক রাজার রাজধানী। বিরাট
রাজা। চিল্কার ধারে রাজ্যপাট নিয়ে বসেছেন—তাই তাকে শহর বলত না বলত পট্টন।
রাজপুরী ত নয়, যেন মন্দির-মঠ উঠেছে আকাশ
ফুঁড়ে। সে পুরীর কাছেই ছোট্ট একটা কুঁড়েঘর ভাড়া করলে মায়েতে ছেলেতে। এখানে ত আর
রীনী-রাজকুমার নন তাঁরা—কে চেনে তাঁদের? তবু দেখা যাক, যদি চেনাশোনা হয়। ভাবছিলেন
আমাদের মহারানী।
কুমারের শুধু জাহাজ-চড়ারই শখ ছিল তা-ই নয়—মার্বেল
খেলাতেও ভারি মজা পেত সে। সঙ্গে ত আর মার্বেল নেই, প্রবালের বলটি দিয়েই শুরু
করেছিল খেলা, সামনের একটা মাঠে।
এখন ব্যাপার এমনি হল যে বিরাট সেই রাজার
বাচ্চা ছেলেরাও ওখানে মার্বেল খেলতে আসত। লাল টুকটুকে বল নিয়ে এক ভিনদেশী ছেলে
তাদের মতোই মার্বেল খেলে, দেখতে পেলো তারা –খেলার সাথী করে ডেকে আনলে তাকে।
কিন্তু প্রবালের চেটে কাচের গুলি টেঁকে
সাধ্যি কি? যতো মজবুত মার্বেলই আনছে রাজার ছেলেরা দু’টুকরো হয়ে ভেঙে যাচ্ছে আমাদের
কুমারের কুঁচবরণ প্রবালের গুলির ঘা খেয়ে।
রাজমন্দিরের বারান্দা থেকে এঁদের খেলা
দেখতেন রোজ একজন। কে বলো ত সে? খেলা-দেখার বাতিক থাকত কার তখন বলতে পারো? উহুঁ।
পারবে না বলতে। রাজকন্যা গো – রাজকন্যা। রোজই কচি মেয়েটি বারান্দায় এসে দাঁড়াত।
মাঠে-ময়দানে নামতে মানা। তা বলে কি খেলার শখ ছিল না তার? ছিল। শখ গেল তার ওই
প্রবালের বলটির উপর।
ওমনি ছুটে বাবার কাছে গিয়ে বললেঃ ‘কি সুন্দর
বল নিয়ে একটা ভিখিরি ছেলে রোজ খেলতে আসে ময়দানে-জানো বাবা? আমার ওটা চাই’।
‘চাই?’ কন্যার মেজাজ বুঝে নিয়ে রাজা বললেন ঃ
‘বেশত, হবে।‘ তারপর হাঁকলেন ঃ ‘কে আছিস রে—নিয়ে আয় তো ছেলেটাকে বলশুদ্ধু’—
ছেলেটাকে আনা হল ওমনি বলশুদ্ধু ধরে। বলের
চমক দেখে ত রাজার চোখ ছানাবড়া। এতো বড় রাজা—রাজভাণ্ডারে কতো শত রাজার ধন,
মণিমাণিক্য, জহরত জমে উঠেছে—দেখেছেন তিনি কতো মহারাজাধিরাজের রত্ন-ভাণ্ডার কিন্তু
এমনটি তো কোথাও দেখেন নি।
দেখে রাজামশাই-এর চোখ বুঁজে এলো।
বোঁজা-বোঁজা ঢুলু ঢুলু চোখে ঘুম-পাওয়া জড়ানো গলায় তিনি বললেন ঃ ‘কোথায় পেলে হে
ছোকরা এ-জিনিস তুমি?’
‘সমুদ্রের থেকে কুড়িয়ে এনেছি মহারাজ’ আমাদের
কুমার বললে।
‘নাও—ওটা রেখে যাও এখানে’। মহারাজ হুকুম
করলেন—আর হুকুম জানালেন ভাণ্ডারীকে ঃ ‘এক হাজার তঙ্কা দিয়ে দাও ছেলেটিকে’।
এবার কুমারের হাঁ করে যাবার পালা। এক হাজার
টাকা। বিশ্বেস করতে ইচ্ছে হল না ব্যাপারটা। কী ওঁদের মনে আছে কে বলবে। চোর বলে না
হাজতে পুরে দেয়।
কিন্তু না, রাজার কথা আর গুলির ঘর একই রকম—নট
নড়ন-চড়ন। একটি হাজার রুপোর টাকা ট্যাঁকশাল থেকে গরম-গরম হাতে তুলে দেওয়া হল
কুমারের একটা তোড়ায় ভরে। কুমার-ও উঠিতো-পড়ি করে দৌড়ে গিয়ে মার হাতে পৌঁছিয়ে দিল
তোড়াটা।
হয়ত ভয় হচ্ছিল, দেরি করলে পাছে রাজার মতি
বদলে যায়। সে-ও তো রাজার ছেলে—রাজার মেজাজ জানা আছে তার।
টাকার তোড়া দেখে ত রানীমার চক্ষুস্থির।
নিশ্চয় চুরি করে এনেছে খোকা কোনো ধনী লোকের বাড়ী থেকে—মা ভাবলেন। রাজা যে
প্রবালের দাম দিয়েছেন হাজার টাকা-এ কথাটি মাকে বোঝাতে হাজার রকম কথা বলতে হল
কুমারকে। সহজে কি বুঝতে চান। সোজা মানুষ, সোজা বুদ্ধি।
এদিকে
রাজকন্যে পেলো হাতে সপ্ত রাজার ধন
চুলে গুঁজে বলছে ঃ দ্যাখো দ্যাখো হীরামন।
হীরামন কিন্তু হীরের টুকরো নয়—তোতাপাখীর ঐ
নাম। তবে পলার মতো তারও ঠোঁট লাল-টুকটুকে কিনা—তাই পক্ষীরাজটির সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছিল প্রবালটি চুলে গুঁজে রাজার ঝিয়ারী।
মালাক্কার লক্কা বাংলার হরিয়াল হয়েছিল, তারই
নাম হীরামন।
হীরামন বলছে ঃ
‘বটে বটে বিকট লালে খুব জড়ালে চুল।
একটি কেন দু’টি পেলে গড়তে কানের দুল’।
0 Reviews