Read more
ছোটরানী ধাইকে বলিলেন—‘ধাই, তুমি রাজবাড়ির
তিন পুরুষের ধাই-মা। সত্যি করিয়া বল দেখি, মানুষের পেটে বিড়ালছানা হইতে দেখিয়াছ?’
কোন্ সময়ের কি মনে করিয়া ছোটরানী এ কথা
বলেন, বুড়ো-বয়সে ধাইয়ের কি অত খেয়াল আছে। ফোকলা মুখে হাসিয়া সে জবাব দিল—‘তাহা কি
কখনও হয় রানী-মা’।
ছোটরানী রাজকন্যাকে দেখাইয়া বলিলেন,--‘তবে
বল দেখি এখন সত্য করিয়া-জন্মের সময় ইহাকে তুমি দেখিয়াছিলে কি না?’
ধাই রাজকন্যার মুখের দিকে চাহিয়া থমকাইয়া
দাঁড়াইল—তাই তো, ছোটরানীর আঁতুড়-ঘরে এই রকমই তো রাজকন্যা জন্মাইয়াছিল।–এই রকমই তো
গায়ে দুধে-আলতা মিশানো স্থলপদ্মের রঙ,আর কালো কুচকুচে দুই ভুরুর মাঝে শ্বেত পদ্মের
একটি টিপ। তার উপর... তার উপর... আবার ধাই জলপদ্মের গন্ধ পাইয়া ঠিক বুঝিতে পারিল—কে
এ। কিন্তু মনের কথা মুখ ফুটিয়া বলার জো কি আছে। ধাইয়ের মুখে কথা সরিল না। মাথা
নীচু করিয়া সে দাঁড়াইয়া রহিল।
ছোটরানীর বুকে তখন মায়ের স্নেহের ঝড়
উঠিয়াছে। ধাইয়ের মুখের জবাব না পাইয়া ধাইয়ের কাছে তিনি আগাইয়া গেলেন, তারপর নিজের
হাত-দুখানি জড়াইয়া ধরিয়া বলিতে লাগিলেন—‘বল, ধাই, বল একবার মুখের কথা ল—এই কন্যাই
আমার আতুড় ঘরে জন্মিয়াছিল কি না। তোমাকে আমার এই গলার হাত দিতেছি-তুমি একবার শুধু
বল, হ্যাঁ—বলিয়াই ছোটরানী নিজের গলার হার খুলিয়া সত্য সত্যই ধাইয়ের গলায় পরাইয়া
দিলেন।
ধাইয়ের মনে কি হইল কে জানে? সে দুই-এবার ঢোক
গিলিয়া বলিয়া ফেলিল—‘রানী-মা অভয় পাই তো বলি—এই রাজকন্যাই আপনার আঁতুড়-ঘের
জন্মিয়াছিল’।
--‘তারপর?’
0 Reviews