Read more
আমরা শিকার করে আনব, খাবার খুঁজে নিয়ে আসব।
এরপর তারা জঙ্গল থেকে নানা রকম পশু পাখি শিকার করে আনতো। আনতো বুনো ফল, কন্দ। আর
বেঞ্জামিন সেগুলো থেকে নানা রকম পদ তৈরী করতো সকলের খাবারের জন্য। এ ভাবেই দেখতে
দেখতে দশ দশটা বছর কেটে গেল। ওদিকে প্রাসাদের সেই ছোট রাজকন্যার বয়সও দশ বছর
হয়েছে। যেমন সুন্দর সে দেখতে তেমনি মধুর তার ব্যবহার। তার মত দয়ালু আর কেউ নেই।
তার কপালে একটা উজ্জ্বল সোনালী তারা। একদিন সে প্রাসাদের একটি কক্ষে দেখল ছোট ছোট
বারোটি জামা ঝোলানো আছে। মাকে তাই সে জিজ্ঞাসা করল, এই জামা গুলি কার? এতো ছোট
জামাতো বাবার নয়।
মা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে জবাব দিলেন – বাছা
এগুলো তোমার বারোজন দাদার। যাদের গলার আওয়াজ আমি অনেকদিন শুনিনি।
--মা আমার সেই বারো জন দাদা কোথায়?
--ঈশ্বর জানেন, বাছারা আমার পথে পথে পথে ঘুরছে?
কেমন আছে? এ কথা বলে রাজকন্যাকে সেই কক্ষে নিয়ে গেলেন যেখোনে কফিন রাখা আছে।
সেখানে খুলে বললেন সব কথা। তার জন্মেরর আগেই তার বারোজন দাদা পালিয়ে গেছে। রানি
আবার কাঁদতে লাগলেন।
--কেঁদো না মা, দাদারা পৃথিবীর যেখানেই থাকুক
আমি তাদের খুঁজে বের করে আনবই। এ কথা বলে রাজকন্যা বারোটি জামা পুঁটুলি বেঁধে নিয়ে
জঙ্গলের পথে হাঁটা দিল। সারাদিন হাঁটতে হাঁটতে দিন শেষে সন্ধ্যের সময় রাজকন্যা এসে
হাজির হল সেই কুটিরের সামনে। যাতে বাস করে তার দাদারা। সে সময় ঘরে ছিল একা
বেঞ্জামিন। কুটিরের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকেই সে দেখল একজন তরুণ ঘরে দাঁড়িয়ে। তাকে
দেখেই তরুণ চিৎকার করে বলল, তুমি কে? কি জন্য এখানে এসেছ? যদিও বেঞ্জামিন সোনার
সুতোয় বোনা পোশাকে কপালে সোনালী তারা মেয়েকে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিল।
--আমি এক হতভাগ্য রাজকন্যা। সে তার হারিয়ে
যাওয়া বারোজন ভাইকে খুঁজতে বেরিয়েছি। এই বলে রাজকন্যা সেই বারোটা জামা দেখাল।
বেঞ্জামিন তক্ষুনি বুঝতে পারল মেয়েটি তাদের বোন। সে বলল, আমি বেঞ্জামিন তোমার
সবচেয়ে ছোট দাদা।
রাজকন্যা তো আনন্দে আত্মহারা হয়ে কেঁদে ফেলল।
বেঞ্জামিনও কাঁদল। তারপর তারা স্নেহ মমতার বাঁধনে বাঁধা পড়ল। কিন্তু বোল আমরা যে
প্রতিজ্ঞা করেছি তরুণী বা বালিকাকে দেখলেই মেরে ফেলব। দাদারা এলে তো প্রথমেই তাই
করবে। কারণ এ জন্যই তো আমরা গৃহহারা, রাজ্য ছাড়া।
--আমি আনন্দের সঙ্গে মরব যদি আমার জন্য আমার
বারোজন ভাই মুক্তি পায়।
--না, তা হতে পারে না। তুমি মরবে না। শোন
দাদারা না আসা পর্যন্ত তোমাকে আমি লুকিয়ে রাখব। তারপর কোন এক সময় সুযোগ বুঝে আমি
তাদের তোমার কথা বলব।
বেঞ্জামিন এ কথা শুনে রাজকন্যা ঘরের মধ্যে
একটা বড় ঝুড়িতে লুকিয়ে পড়ল। অন্ধকার হতেই এগারো জন শিকার করে ফিরে এল।বেঞ্জামিন
খুব তাড়াতাড়ি খাবার রান্না সেরে ফেলল। বারোজন টেবিলে পাশাপাশি খেতে বসল। দাদারা
বেঞ্জামিনকে জিজ্ঞাসা করল কোন খবর আছে?
তোমরা কি কোন খবরই রাখ না –বেঞ্জামিন উত্তর
দিল। দাদাদের উত্তর না। তোমরা জঙ্গলে ঘুরে বেড়াও অথচ কোন খবর রাখ না। আর আমি ঘরে
বসেই অনেক খবর জানতে পারি।
বেঞ্জামিনের একথা শুনে দাদারা বলল, ‘সংবাদটা
আমাদের তাড়াতাড়ি বল। তাহলে তোমাদের কথা দিতে হবে প্রথম যে কিশোরীকে তোমরা দেখবে
তাকে হত্যা করবে না’।
0 Reviews