Read more
ঠিক আছে আমরা শপথ করছি—বেঞ্জামিনের দাদারা
প্রতিজ্ঞা করল। আমাদের বোন আজ এখানে এসেছে। একথা বলে সে বোনকে ঝুড়ি থেকে বার করল।
রাজকন্যাকে তার রাজকীয় পোশাকে খুব সুন্দর আর শান্ত ভদ্র দেখাচ্ছিল। বারো ভাইই তার
কপালে সোনালী তারা জ্বল জ্বল করতে দেখল। তাদের মনের মধ্যেও স্নেহের সঞ্চার হল।
সবাই মিলে বোনকে আদর করতে লাগল।
রাজকন্যা আর প্রাসাদে ফিরে গেল না। সেও
দাদাদের সাথে কুটিরে থেকে গেল। এখন সে বেঞ্জামিনের কাজে সাহায্য করে ঘর দোর
পরিষ্কার করে। ভাল ভাল সুস্বাদু খাবার তৈরি করে। পরিষ্কার করে পিছানা পেতে রাখে।
দাদারা শিকার করে এসেই গরম গরম খাবার খেতে পায়। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় না।
আনন্দের সঙ্গেই একসাথে তাদের দিন কাটতে থাকে।
একদিন যখন ভাই বোনেরা একসাথে বসে খুব খাবার
খাচ্ছে এবং তদের মন খুশিতে ভরপুর তখন রাজকন্যা ভাইদের কিছু দিতে ইচ্ছেহল। কুটিরের
পিছনে ছিল একটা জঙ্গলে ভরা পোড়ো বাগান। সেখানে ফুটে ছিল বারোটি লিলি ফুল। রাজকন্যা
ভাবল সেগুলি তুলে সে দাদাদের দেবে। যেমনটি ভাবা অমনি রাজকন্যা যেই এক এক করে
বারোটি ফুল গাছ থেকে তুলেছে তেমনি তার বারোজন দাদা এক এক করে বারোটি কাক হয়ে আকাশে
উড়ে চলে গেল। সেই মুহূর্তেই বাগান, তাদের কুটির সব অদৃশ্য হয়ে গেল। রাজকন্যা একাকী
গভীর জঙ্গলে দাঁড়িয়ে।
ভয় পেয়ে চারিদেকে তাকাতে তাকাতে রাজকন্যা
দেখল তার কাছে দাঁড়িয়ে আছে থুরথুরে এক বুড়ি। বুড়ি বলল, ‘কন্যা তুমি এ কি করলে?
তোমার সাদা বারোটি ফুল গাছ থেকে তোলা উচিত হয়নি। সে জন্যই তোমার দাদারা কাকে পরিণত
হয়েছে ।
রাজকন্যা বলল, ‘এখন তাদের ফিরে পাব কি করে’?
--সে বড় কঠিন কাজ কন্যে। কারা পৃথিবীতে একটা
মাত্র উপায়ই আমার জানা আছে। কিন্তু বুড়ি বলল তা এত কঠিন কাজ যে তাদের মুক্তি পাওয়া
অসম্ভব। সাত সাতটা বছর তোমার কথা বলা বা হাসা চলবে না। সেই সময়ে এক সেকেন্ড বাকী
থাকতে যতি তুমি একটাও শব্দ উচ্চারণ কর তবে বারোজনই মারা যাবে।
রাজকন্যা নিজের মনেই বলল যত কঠিন কাজই হোক
আমাকে পারতেই হবে। তারপর সে একটা খুব বড় গাছ বেছে নিয়ে অনেক উঁচুতে সে বাসা বেঁধে
থাকল। কোন কথা না বলে, না হেসে সেখানে সে কেবল সুতো কেটে দিল কাটতে লাগল।
বেশ কিছুদিন কেটে যাওয়ার পর এক রাজা এল সেই
জঙ্গলে শিকার করতে। তার সবচেয়ে বড় শিকারী কুকুরটা সেই গাছের তলায় এসে উপর দিকে মুখ
তুলে ঘেউ ঘেউ ডাক ছাড়তে লাগল। রাজা সেই ডাক শুনে গাছ তলায় এসে উপরে তাকিয়ে দেখেন
এক সুন্দরী কন্যা কপালে যার উজ্জ্বল তারা। রাজা নিচু থেকে জিজ্ঞাসা করলেন কন্যা
তার রানি হতে রাজি কিনা। রাজকন্যা কোন কথা না বলে কেবল মাথা নাড়ল। রাজা তখন গাছের
উপর উঠে রাজকন্যাকে নিচে নামিয়ে এনে ঘোড়ার পিঠে তুলে রাজপ্রাসাদে।
তারপর একদিন মহা ধুমধাম করে রাজা তাকে বিয়ে
করল। কত আনন্দ হৈ চৈ হল, বাজী পুড়ল। রাজকন্যা কিন্তু কথাও বলে না হাসেও না। দিন
কেটে যায়। এভাবে দু’বৎসর কেটে গেল। রাজার মা ছিল খুব অহংকারী ও দুষ্টু। সে তার
ছেলেকে তার রানির বিরুদ্ধে কানভারী করতে লাগল। একটা ভিখারীর মেয়েকে বিয়ে করে রানি
করেছিস। সে জানে বাবা মেয়েটা ডাকিনী কিনা। রাজ্যে কি ক্ষতি করছে কে জানে? না হয় সে
বোবা তা বলে কি হাসতে পারে না। যারা হাসে না তাদের মনে কু-মতলব থাকে...। রাজা
প্রথম প্রথম এ সব কথা বিশ্বাস করত না। কিন্তু বুড়ি রাজামাতা বার বার রাজাকে একথা
বলায় রাজার বিশ্বাস জন্মাল যে রানি একজন ডাইনী। সে জন্য তিনি রানির বিচার করে
রানিকে মৃত্যুদন্ড দিলেন।
0 Reviews